স্বদেশ ডেস্ক:
বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আগামী ২২ আগস্ট শুরুর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। মাঠ পর্যায়ে প্রত্যাবাসন শুরুর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ট্রানজিট ক্যাম্প, মেডিক্যাল টিম, রোহিঙ্গাদের বহনের জন্য পরিবহনসহ সব কিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে কয়েক দফা বৈঠকও শেষ করেছেন। বাংলাদেশের প্রস্তুতি মিয়ানমারকেও ইতিমধ্যে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকারের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সাক্ষাৎকার শুরু করা হবে। সাক্ষাৎকারের সময় ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। তবে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হলো, কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না। শুধু স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হওয়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন করা হবে।
তবে পুরো প্রস্তুতি থাকলেও ২২ আগস্টই প্রত্যাবাসন শুরু হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় এখনো কাটছে না। কারণ প্রত্যাবাসনের জন্য একতরফাভাবে মিয়ানমারের তারিখ ঘোষণার পিছনে আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কৌশল থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনকে পাশ কাটানোর জন্য প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার মরিয়া।
মিয়ানমার দ্বিতীয় দফায় পরিবার ও গ্রামভিত্তিক যাছাই-বাছাইয়ের পর রাখাইনের মংডু এবং বুথিডংয়ের ৩৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রহণে অনাপত্তি দেয়। তবে এই অনাপত্তি তালিকায় বাংলাদেশ বেশ কিছু অসংগতি পেয়েছে। সেখানে ১ হাজার ৫৬টি পরিবারের ৩৪৫০ জনের নাম রয়েছে। কিন্তু তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে ১৫টি পরিবারের ৪৭ জনের নাম দুবার স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ নাম পাঠায়নি এমন তিনটি পরিবারের ৪ জনের নাম মিয়ানমার তালিকায় যুক্ত করে দিয়ে ফেরত চেয়েছে। এসব ব্যক্তিদের
বিষয়ে বাংলাদেশ খোঁজখবর নিচ্ছে। সব মিলে অতিরিক্ত ১৮টি পরিবারের ৫১ জনকে বাদ দিয়ে সংশোধিত একটি তালিকা করেছে বাংলাদেশ। তালিকায় থাকা ১০৩৮টি পরিবারের ৩৩৯৯ জনের চূড়ান্ত মতামত গ্রহণের জন্য চুক্তি অনুযায়ী গত ৮ আগস্ট জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ। ইউএনএইচসিআর এখন তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের মতামত নিচ্ছে তারা ফিরতে রাজি কিনা। তবে কারা কারা ফিরতে রাজি সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়নি সংস্থাটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকতা বলেন, ইউএনএইচসিআরকে আমরা তালিকা দিয়েছি কারা ফিরতে রাজি। কিন্তু এখনো সংস্থাটি আমাদের প্রতিবেদন দেয়নি। আশা করা হচ্ছে আজকালের মধ্যে প্রতিবেদন পেয়ে যাব। ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী যেসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি হবে শুধু তাদের পাঠানো হবে। সেই দল যত ছোটই হোক না কেন। তবে বাংলাদেশ কখনোই কোনো রোহিঙ্গাকে জোর করে ফেরত পাঠাবে না।
জানা গেছে, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ দুটি ট্রানজিট পয়েন্ট প্রস্তুত করেছে। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নৌপথটি ব্যবহার করা হবে না। শুধু বান্দরবানের ঘুমধুমের স্থলপথেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে। সে ক্ষেত্রে এক দিনে ১৫০ জনের বেশি পাঠানো যাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান অ্যারেঞ্জমেন্ট অনুযায়ী দুটি পথে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবো যাবে। সে ক্ষেত্রে উভয় দেশের সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া বাকি ৫ দিনে সর্বোচ্চ ১৫০০ জন ফিরতে পারবে। অবশ্য দুপক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
কক্সবাজারে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের সরেজমিনে সাক্ষ্য নিতে গতকাল কক্সবাজারে এসেছে মিয়ানমারের তদন্ত দল। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে দুপুরে প্রথমে দলটি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম ও পরে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।